শনিবার, ১৬ মে, ২০১৫









           প্রবাসের কান্না


         হায়রে আমার চোখের মণি। চার বছরের আদরের শিশু। পরানের পরাণ। ডাকিও তাই

শাহপরান। ছয় মাস কেটে গেল। জন্মভূমি থেকে ফিরে আসার। দুই চর্মচক্ষে দেখা হচ্ছে না,মনে

হয় , দুই যুগ ধরে। কোথায় পাব দেখা! আমার আদর তো থাকে হাজার হাজার মাইল দূরে।


                       মনটা বার বার হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কোথায় পাব দেখা! এই ব্যথা কী সহনীয়! হায়রে
আমার জীবন। মাঝে মাঝে ছোট্র বাবার  সঙ্গে মোবাইলে কথা বলি। তাই বলে সহচর্যের ক্ষুধা  কী
মিটে? হায়রে পরান!  


গত গ্রীষ্মে দেশে গিয়েছিলাম।  আমার হাত ধরে গাঁয়ের পথ দিয়ে হাঁটত । আমি কোথাও রওয়ানা

দিলে কান্না শুরূ করত ।  বুকে নিয়ে আদর করে কান্না থামাতাম । পরে চুপিচুপি গন্তব্যস্হানে  যেতাম।

ঘরে ফিরে আগে আমার বাছার সঙ্গে দেখা করতাম । হাতে গ্রীষ্মের লিচু ফল দিয়ে বলতাম , বাবা

খাও । আমার পরান নিজে খেত এবং আমাকেও খাইয়ে দিত । আমার হাত ধরে হাঁটার জন্য সে

খুবই পাগল। রীতিমত আমার ভক্ত ।



                    আমার সেই ছোট্র বাবাকে আজ বহুদিন ধরে দেখি না  দুই জীবন্ত চোখে । তবে  ঘুম

নামক অর্ধমৃত চোখে তাকে বহুবার দেখেছি । এই দূর দেশে তার স্মৃতি ভাবাই আমার শখ । আমার

ছোটবেলায় খেলাধূলাই বেশি পছন্দ করতাম । বড় হয়ে ফুল বাগান পরিচর্যাই বেশি শখ ছিল ।

আর এখন এই বিদেশের জীবনে আমার ছেলের স্মৃতি ভাবাই আমার সবচেয়ে প্রিয় শখ। রাতে

ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি টেরও পাই না । প্রায় প্রতি রাতেই ওরে স্বপ্নে দেখি ।

ঘুমের ঘোরেই ওর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি । ঘুম থেকে জেগেই দেখি , আমার চোখে - মুখে পানি।

এ প্রসঙ্গে একজন মনীষির একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা যায় ,"  প্রতি রাতেই  ঘুম থেকেই জেগে দেখি

আমার মুখ ও বুক চোখের পানিতে ভিজে গেছে । তাহলে কী  আমি ঘুমের ঘোরেও  তোমার  জন্য

কষ্ট পাই ! "        


                                                               ( চলবে)


               রচয়িত : ডা. মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন